পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার পর বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে যে অগ্রগতি ছিলো সেই অগ্রগতিকে আরো গতি প্রদান করতে তৈরি করা হয়েছিলো মুজিবনগর সরকার। সেই সাথে মুজিবনগর সরকার গঠনের উদ্দেশ্য ছিলো পুরো যুদ্ধকালীন সময়ে যেনো যোদ্ধা এবং সাধারণ বাঙালি নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হতে পারে।
বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, নিজের সাধারণ জ্ঞানের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলা কিংবা স্বদেশের ইতিহাস সম্পর্কে জেনে স্বদেশের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা তুলে ধরার প্রয়াসে আমাদের জানতে হবে মুজিবনগর সরকার কোথায় গঠিত হয়, মুজিবনগর সরকার কবে গঠিত হয়, মুজিবনগর সরকারের সদস্য ছিলেন কে কে। চলুন তবে আজ এ-সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
মুজিবনগর সরকার কোথায় গঠিত হয়?
মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। যদিও বর্তমানে এই স্থানটিকে বা উপজেলাটিকে মুজিবনগর নামে নামকরণ করা হয়েছে। উক্ত গ্রামের আমবাগানে মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় এবং শপথ গ্রহণ করে অফিসিয়ালি এই সরকারের কার্যক্রম শুরু করে।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, মুজিবনগর সরকারসহ পুরো স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়টাতে এই মুজিবনগর নামক স্থানটি বেশ গুরুত্বের সাথেই ব্যবহৃত হয়েছে। যদি কখনো সময় সুযোগ হয় সেক্ষেত্রে কলকাতার এই স্মৃতিময় গ্রামটি থেকে ঘুরে আসতে ভুলবেন না।
মুজিবনগর সরকার কবে গঠিত হয়?
মুজিবনগর সরকার কোথায় গঠিত হয় সে ব্যাপারে তো জানলেন। এবার জানাবো এই সরকার কবে গঠিত হয়েছে। মূলত ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে একটি অস্থায়ী সরকার হিসাবে বাংলাদেশে এই সরকারটিকে গঠন করা হয়। সরকার গঠনের ১ সপ্তাহের মধ্যেই অর্থ্যাৎ ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে এই সরকার মুজিবনগর গ্রামের বড় আম গাছটির নিচে শপথ গ্রহণ করে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ১৬ ই ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত অর্থ্যাৎ দেশ স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত মুজিবনগর উপজেলাটিকে বাংলাদেশের রাজধানী হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
মুজিবনগর সরকারের সদস্য ছিলেন কে কে?
বাংলাদেশের সেসময়কার জনগনের রায়ে যারা নির্বাচিত হয়েছেন সেসব সদস্যদের নিয়েই মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রণালয় গঠিত হয়েছিলো। সরকারটির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সর্বমোট ১১ জন মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি। যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলাম ছিলেন উপ-রাষ্ট্রপতি।
সেই সাথে উক্ত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ প্রধানমন্ত্রী, এম মনসুর আলী, খন্দকার মুশতাক আহ্ম, আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, শেখ আবদুল আজিজ, ফণী মজুমদার, আব্দুস সামাদ আজাদ, জহুর আহ্মদ চৌধুরী এবং এম ইউসুফ আলী।
মুজিবনগর সরকার কেন গঠিত হয়?
মুজিবনগর সরকার গঠন করার প্রধান কারণ ছিলো সঠিকভাবে একটি সিস্টেমেটিক উপায়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা। সেই সাথে এই সরকার গঠনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসাবে কাজ করেছিলো মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে দেশে ও বিদেশে শক্ত এবং পাকাপোক্ত জনমত গড়ে তোলা।
তাছাড়া সারা বাংলাদেশকে সর্বমোট ১১ টি প্রশাসনিক অঞ্চলে ভাগ করে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পথ তৈরির কথা মাথায় রেখেও এই সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমান মুজিবনগর) শপথ গ্রহণ করেন।
পশিম পাকিস্তানী স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠীর নিরীহ বাঙ্গালীদের উপর ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর সশস্ত্র সেনাবাহিনী দিয়ে হামলা চালায়।
তবে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দেশের জনগণের প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী সংগঠন গঠন ও সমন্বয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায় এবং এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তাকারী রাষ্ট্র ভারতের সরকার ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক রক্ষায় মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
মূলত মুজিবনগর সরকার গঠনের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের প্রতিরোধযুদ্ধ প্রবল যুদ্ধে রূপ নেয় এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়।
মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন কে?
মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। এই সরকার গঠনের পর শপথ বাক্য পাঠ করেন তওফিক ইলাহী চৌধুরী। তওফিক ইলাহী চৌধুরী সেসময় মেহেরপুর মহকুমার তৎকালীন প্রশাসক ছিলে। আর বর্তমানে তিনি ভারত বাংলা সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান কেন আম্রকাননে হয়?
সারা দেশের অর্থ্যাৎ বাংলাদেশের পাকিস্তান বাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে এবং নিরাপদে শপথ অনুষ্ঠানের আয়োজন সারতে মুজিবনগর সরকারের শপথ অনুষ্ঠান মুজিবনগর উপজেলার আম্রকাননে অনুষ্ঠিত হয়।
এপ্রিলের ১৭ তারিখ সকাল ৯ টা থেকে এই শপথ অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করে থাকে। বেশকিছু অতিথি, মন্ত্রী এবং রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের পাশাপাশি অনুষ্ঠানটিতে ৫০ জন সাংবাদিক হাজির হয়। সেদিন বেলা ১১ টায় সব জল্পনা-কল্পনা শেষে মূল শপথ-পাঠ পরিচালিত হয়।
মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রমগুলি কি কি?
মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রমগুলি ছিলো মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশের সাধারণ মানুষকেন্দ্রিক। চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সে-সময় মুজিবনগর সরকারের কার্যক্রমগুলি কি কি ছিলো:
- ১১ টি প্রশাসনিক অঞ্চলকে পরিচালনা করা
- মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করা
- দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি জনমত গড়ে তোলা
- সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধকে যথাসম্ভব সুসংগঠিত করার
মুজিবনগর সরকার গঠনের ফলাফল কি?
মুজিবনহর সরকার গঠনের কারণের সাথে এর ফলাফল খুব একটা আলাদা নয়। বলতে গেলে দুটোই এক। বিশেষ করে মুজিবনগর সরকারের সঠিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করার ক্ষেত্রে যে দক্ষতা দেখিয়েছে তা বেশ প্রশংসার যোগ্য।
সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে বলেই বিভিন্ন দেশ থাকে সাপোর্ট পাওয়া, যোদ্ধাদের সহযোগিতা করা কিংবা প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন অঞ্চল শত্রুমুক্ত করাটা সহজ হয়েছে। মোটকথা মুজিবনগর সরকার গঠনের ফলাফল হলো মাত্র ৯ মাসের মাথায় স্বাধীন এবং হানাদার বাহিনী মুক্ত সম্পূর্ণ নতুন বাংলাদেশের সৃষ্টি।
মুক্তিযুদ্ধে মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা বর্ণনা কর
মুক্তিযুদ্ধের মুজিবনগর সরকারের ভূমিকা হিসাবে শুরুতে বলতে হয় বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি। পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করতেও যথেষ্ট অবদান রেখেছে মুজিবনগর সরকার।
ইতি কথা
আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে এই বিষয়ে আরো নতুন নতুন তথ্য পেতে অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন আর প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আর্টিকেল পড়তে থাকুন আশা করি আপনাদের অনেক উপকারে আসবে আমরা এইসব বিষয়ে সকল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করি আপনার যদি নির্দিষ্ট কোন টপিক থাকে তাহলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।
আমরা সে বিষয়ে আর্টিকেল পাবলিশ করার চেষ্টা করব সবাইকে ধন্যবাদ এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য। সবাই অনেক ভালো থাকবেন আর আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকবেন আজকের আর্টিকেল রিলেটেড আপনাদের যদি কোন কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন আমরা আপনাদের সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব।
মনে রাখবেন, মুজিবনগর সরকার কোথায় গঠিত হয়, কেনো এবং কিভাবে গঠিত হয়… এই ধরণের প্রশ্নগুলি বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বেশ গুরুত্বের সাথে বিবেচিত। সুতরাং সাধারণ জ্ঞানের অংশ হিসাবে এসব তথ্য জেনে রাখাটা অতিব জরুরি। আল্লাহ হাফেজ।